বিজ্ঞাপন
ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের অনন্তপুর গ্রামের মৃত সাহেব আলীর ছেলে সাংবাদিক শফিউল আলম ও তার ছোটভাই হাবিজুল আলম দীর্ঘদিন ধরে তাহিরপুর উপজেলার আমতৈল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মোছাঃ রেহেনা বেগমের দাদন ব্যবসার ভুক্তভোগী হয়ে আসছেন।
২০২৩ সালের ৬ মার্চ হাবিজুল আলম বিপদে পড়ে রেহেনা বেগমের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা ধার নেন। তবে ধার শর্তে সুদ বাবদ অতিরিক্ত ৩০ হাজার টাকা প্রদানের অঙ্গীকার করতে হয়। পরবর্তীতে সময়মতো সুদ পরিশোধ করলেও মূল টাকা ফেরত দিতে না পারায় শিক্ষিকা রেহেনা বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকেন।
২০২৩ সালের ৭ আগস্ট জামালগঞ্জ উপজেলার তেলিয়া লামাপাড়া গ্রামের আলিম উদ্দিনের একটি পাওয়ার টিলার কৃষিকাজের জন্য রাজাই গ্রামে পাঠানো হলে দাদন ব্যবসায়ী রেহেনা বেগম সেটি জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা চালান। এ সময় সাংবাদিক শফিউল আলম জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করলে স্থানীয়দের সহযোগিতায় টিলারটি রক্ষা পায়।
ঘটনার পর ২০২৩ সালের ৯ আগস্ট সাংবাদিক শফিউল আলম সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু তদন্ত সত্ত্বেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় রেহেনা বেগম আরও ক্ষিপ্ত হন।
পরে তিনি উল্টো সাংবাদিক শফিউল আলম, তার ভাই শামছুল আলম ও হাবিজুল আলমের বিরুদ্ধে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান বরাবরে আলাদা দুটি অভিযোগ দায়ের করেন। তবে ইউনিয়ন পরিষদে শুনানি শেষে রেহেনার অভিযোগ খারিজ হয়।
২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর বাদাঘাট বাজার এলাকায় শফিউল আলমকে আটক করে শারীরিক নির্যাতন চালায় রেহেনা বেগম ও তার সহযোগীরা। জোরপূর্বক একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নগদ ৩০ হাজার টাকা আদায় করেন এবং সাংবাদিকের সোনালী ব্যাংকের চেক থেকে আরও এক লাখ ৭০ হাজার টাকা আদায়ের চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ঘটনায় আহত সাংবাদিক বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন এবং ২৭ নভেম্বর সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার ও তাহিরপুর থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ দায়েরের ১৮ দিন পর ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর রেহেনা বেগম সাংবাদিক শফিউল আলম ও হাবিজুল আলমের বিরুদ্ধে দুই লাখ টাকা পাওনা দাবিতে একটি মামলা (নং–২৭০/২০২৪) দায়ের করেন। তবে আদালত সাংবাদিক শফিউল আলমকে ওই মামলায় অব্যাহতি দেন। মামলাটি বর্তমানে বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে বিচারাধীন।
অন্যদিকে সাংবাদিক শফিউল আলমও রেহেনা বেগমকে আসামি করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, তাহিরপুর জোনে একটি মামলা (নং–১১৭/২৪) দায়ের করেন। আদালত এ মামলার তদন্তভার দেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে। তদন্তে রেহেনা বেগমের দাদন ব্যবসার বিষয়টি উঠে এসেছে।
সাংবাদিক শফিউল আলম বলেন, “একজন সরকারি শিক্ষিকার দাদন ব্যবসায় আমাদের পরিবার ধ্বংসের মুখে পড়েছে। প্রশাসন ও আদালতে অভিযোগ করার পরও বারবার মিথ্যা মামলার ফাঁদে ফেলার চেষ্টা চলছে। আমরা এখন প্রাণনাশের হুমকির মধ্যেই আছি।”
অভিযুক্ত শিক্ষিকা রেহেনা বেগমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তার দায়ের করা মামলায় বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন অভিযোগ উপস্থাপন করায় বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সাংবাদিক মহল মনে করছে, সরকারি দায়িত্বে থাকা একজন প্রধান শিক্ষিকা যদি দাদন ব্যবসার মতো বেআইনি কাজে জড়িত হন এবং প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়, তবে এর ফলে সাধারণ মানুষ আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
প্রতিবেদক - খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সুনামগঞ্জ।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...