Logo Logo

গাজায় ইসরায়েলের নতুন কৌশল : বিস্ফোরকভর্তি রোবট দিয়ে ভয়াবহ হামলা


Splash Image

ইসরায়েলের দূরনিয়ন্ত্রিত ও বিস্ফোরকভর্তি 'রোবট'। ছবি: মিডল ইস্ট আই

গাজা উপত্যকার ঘনবসতিপূর্ণ গাজা নগরীতে নতুন এক যুদ্ধকৌশল চালু করেছে ইসরায়েল। আকাশপথের হামলার পাশাপাশি এখন দূরনিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরকভর্তি রোবট ও এপিসি (আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার) ব্যবহার করছে তারা। এই কৌশল স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


মিডল ইস্ট আই-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩৫ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি নাগরিক হামজা শাবান সম্প্রতি এমনই এক বিস্ফোরণ থেকে প্রাণে বাঁচেন। তিনি জানান, “আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম, রোবটটি কোথায় আছে। আমার কাছে, নাকি কাছাকাছি?” পরে দেখতে পান রোবটটি প্রায় ১০০ মিটার দূরে। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে ভয়াবহ বিস্ফোরণে তিনি জানালা থেকে ছিটকে পড়েন। শাবান বলেন, “আমি হামাগুড়ি দিয়ে শোবার ঘরের দিকে পালাতে শুরু করলাম। চারপাশে উড়তে থাকা ধ্বংসাবশেষের শব্দে মনে হচ্ছিল, ভবনটা মুহূর্তেই ধসে পড়বে।”

তিনি আরও জানান, রাত ১০টা-১১টার দিকে যখন মানুষ ঘুমাতে যায়, তখনই বিস্ফোরণ শুরু হয়। প্রায় প্রতি রাতেই ৮ থেকে ১০টি তীব্র বিস্ফোরণের শব্দে শহর কেঁপে ওঠে। শাবানের ভাষায়, “এসব বিস্ফোরণ এত শক্তিশালী যে, পুরো ভবন গুঁড়িয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। বিমান হামলার সঙ্গে তুলনা করলেও এই রোবট অনেক বেশি বিধ্বংসী।”

ইসরায়েল স্থলসেনা মোতায়েন না করে রিমোট-কন্ট্রোলড এপিসি ও বিস্ফোরকভর্তি রোবট পাঠাচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব যান রাস্তার বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরকভর্তি ব্যারেল ফেলে, পরে একসঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুরো এলাকার সর্বোচ্চ ক্ষতি করে।

গাজাভিত্তিক সরকারি গণমাধ্যম দপ্তরের তথ্যমতে, গত ১৩ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ১০০টি বিস্ফোরক রোবট ব্যবহার করেছে ইসরায়েল। অলাভজনক সংস্থা ইউরো-মেডিটেরেনিয়ান হিউম্যান রাইটস মনিটরের হিসাব বলছে, প্রতিটি রোবটে প্রায় সাত টন বিস্ফোরক ভরা থাকে এবং এসব হামলায় প্রতিদিন প্রায় ৩০০টি আবাসিক ইউনিট ধ্বংস হচ্ছে।

সংস্থাটি সতর্ক করে জানিয়েছে, “এই রোবটগুলো এমন এক অভূতপূর্ব গতিতে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা ইঙ্গিত দেয়—গাজা নগরীকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে।” তাদের মতে, বর্তমান গতিধারা অব্যাহত থাকলে দুই মাসের মধ্যেই গাজার অবশিষ্ট অংশ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

হামাস একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সই করলেও ইসরায়েল সেটি বাতিল করে। এরপর দেশটির নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা পুরো গাজা উপত্যকা দখলের পরিকল্পনা অনুমোদন দেয়, যার শুরু হয়েছে গাজা নগরী থেকে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়ালা জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইসরায়েলি সেনারা বিস্ফোরক রোবটের ব্যবহার তিন গুণ বাড়িয়েছে। শত শত নতুন রোবট গাজায় পাঠানো হচ্ছে, যা সরাসরি সংঘর্ষ এড়িয়ে স্থল অভিযানে সেনাদের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হলেও গাজার সাধারণ মানুষের জন্য পরিণত হচ্ছে ভয়াবহ বিপর্যয়।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...