বিজ্ঞাপন
তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, হামাস নেতাদের জন্য কোনো ধরনের ‘অনাক্রম্যতা’ নেই এবং তারা ‘যেখানেই থাকুক না কেন’ ইসরায়েলের টার্গেট হবেন।
রোববার জেরুজালেমে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, প্রতিটি দেশেরই সীমান্তের বাইরে নিজেদের নিরাপত্তা রক্ষার অধিকার রয়েছে। তবে কাতারে হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলের এই হামলা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এ হামলার কড়া সমালোচনা করেছেন। হামাস জানিয়েছে, হামলায় ছয়জন নিহত হলেও তাদের শীর্ষ নেতারা প্রাণে বেঁচে গেছেন।
নেতানিয়াহুর ভাষ্য, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। তিনি বলেন, "আমরা এককভাবে এটি করেছি, ব্যস।"
অন্যদিকে রুবিও বিবিসিকে নিশ্চিত করেছেন, ওয়াশিংটন উপসাগরীয় মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রেখেছে। বৈঠকের সময় দুই নেতা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সম্পর্কের দৃঢ়তা এবং প্রযুক্তি ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রসঙ্গে একমত হন।
এই বৈঠকটি এমন সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যখন আরব নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে কাতারের প্রতি সংহতি প্রকাশের আহ্বান করা হয়েছিল। কাতারের প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্বৈত মানদণ্ড বাদ দিয়ে ইসরায়েলকে ‘অপরাধের জন্য’ শাস্তি দেওয়ার আহ্বান জানান। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও দু’বার বলেন, নেতানিয়াহু কাতারে আর কোনো হামলা করবেন না।
কাতারে একটি গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন বিমানঘাঁটি রয়েছে, যা গাজা যুদ্ধ বন্ধে কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় দীর্ঘদিন ধরে ভূমিকা পালন করছে। ২০১২ সাল থেকে দেশটি হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোকে আশ্রয় দিচ্ছে। ইসরায়েল সফর শেষে রুবিও কাতারও যাবেন বলে জানা গেছে।
একই সময়, গাজা সিটিতে ইসরায়েলি বাহিনী আবাসিক ভবন ধ্বংস অব্যাহত রাখছে এবং শহরের পশ্চিমাঞ্চলে স্থল অভিযান শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাসিন্দাদের শহর ছেড়ে দক্ষিণের কেন্দ্রীয় এলাকায় যেতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রায় আড়াই লাখ ফিলিস্তিনি সরে গেছেন। তবে অনেক বাসিন্দা জানাচ্ছেন, দক্ষিণে নিরাপত্তা নেই, এবং তাঁবু বা আশ্রয়ের অভাবে অনেকেই ফের শহরে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। হাফেজ হাবুস বলেন, "আমাদের কোনো অর্থ নেই, তাঁবু নেই, অস্থায়ী আশ্রয় নেই। আমরা কীভাবে দক্ষিণে যাব?"
জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, যেখানে ইতোমধ্যেই দুর্ভিক্ষ ঘোষণা হয়েছে, সেখানে হামলার তীব্রতা বাড়লে সাধারণ মানুষ আরও ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়বে। নেতানিয়াহু ও রুবিওর বৈঠক জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের আগে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী সপ্তাহে কিছু পশ্চিমা দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয় বিবেচনা করছে, যা ইসরায়েলের অভ্যন্তরে বিতর্ক বাড়িয়েছে।
ইসরায়েল গত আগস্টে জেরুজালেমের পূর্বে ‘ই১’ বসতি প্রকল্প অনুমোদন দেয়, যা পশ্চিম তীরকে কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত করবে। নেতানিয়াহু বলেন, "কোনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র হবে না। এই ভূমি আমাদের।" চলতি মাসে ইসরায়েলের অতিদানপন্থী অর্থমন্ত্রী পশ্চিম তীরের চার-পঞ্চমাংশ সংযুক্ত করার প্রস্তাব দেন।
১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর থেকে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে প্রায় ১৬০টি বসতি গড়ে তোলা হয়েছে, যেখানে প্রায় ৭ লাখ ইহুদি বসবাস করছে। ফিলিস্তিনিরা গাজাসহ ওই অঞ্চলগুলো নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখছে। আন্তর্জাতিক আইনে এসব বসতি অবৈধ।
সোমবার সন্ধ্যায় রুবিও ‘সিটি অফ ডেভিড’ প্রত্নতাত্ত্বিক পার্ক পরিদর্শন করবেন, যা বসতি স্থাপনকারী একটি সংগঠন পরিচালনা করে। তিনি ‘তীর্থযাত্রা পথ’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। সমালোচকরা বলছেন, প্রত্নতত্ত্বকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের স্থানচ্যুত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...