বিজ্ঞাপন
ভ্রমণ স্বাধীনতার এই বৈষম্যের পরিমাপ করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবছর প্রকাশ করে “হেনলি পাসপোর্ট সূচক”। কোনো দেশের নাগরিকরা ভিসা ছাড়াই কতটি দেশে প্রবেশ করতে পারেন, তার ওপর ভিত্তি করেই এই তালিকা তৈরি করা হয়।
২০২৫ সালের সর্বশেষ এই সূচকে বাংলাদেশের পাসপোর্টের তিন ধাপ অবনতি হয়েছে। গত বছর (২০২৪) ৯৭তম অবস্থানে থাকলেও এবার বাংলাদেশের অবস্থান উত্তর কোরিয়ার সাথে যৌথভাবে ১০০তম। বর্তমানে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা বিশ্বের মাত্র ৩৮টি দেশে ভিসা ছাড়া বা অন-অ্যারাইভাল ভিসায় ভ্রমণ করতে পারেন।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের পেছনে রয়েছে নেপাল (১০১তম) ও পাকিস্তান (১০৩তম)। তবে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে ভারত (৮৫তম)।
এবারের সূচকে টানা চতুর্থ বছরের মতো বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্টের অধিকারী হয়েছে সিঙ্গাপুর। দেশটির নাগরিকরা বিশ্বের ২২৭টি গন্তব্যের মধ্যে ১৯৩টিতে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারেন। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া (১৯০টি গন্তব্য) এবং তৃতীয় স্থানে জাপান (১৮৯টি গন্তব্য)। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে এশিয়ার এই দেশগুলোর দাপট অব্যাহত রয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাতটি দেশ— ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, ইতালি, ফিনল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ ও সুইডেন— যৌথভাবে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। এই দেশগুলোর নাগরিকরা ১৮৭টি দেশে ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার ভোগ করেন।
র্যাঙ্কিংয়ের অন্য প্রান্তে রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় জর্জরিত দেশগুলো। আফগানিস্তান, সিরিয়া ও ইরাক তালিকার একেবারে নিচে অবস্থান করছে। এই দেশগুলোর নাগরিকরা যথাক্রমে মাত্র ২৪, ২৬ ও ২৯টি দেশে ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন।
একসময় পাসপোর্টের শক্তিতে শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য এখন তালিকায় বেশ পিছিয়ে গেছে। ২০১৪ সালে শীর্ষে থাকা আমেরিকা এখন মালয়েশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে ১২তম স্থানে নেমে এসেছে। মার্কিন নাগরিকরা বর্তমানে ১৮০টি দেশে ভিসা ছাড়া প্রবেশ করতে পারেন। ২০১৫ সালে শীর্ষে থাকা ব্রিটেন নেমে এসেছে অষ্টম স্থানে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মূল কারণ ‘ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নীতি’। ধনী দেশগুলো যখন নিজেদের সীমান্তে ভিসা নীতি কঠোর করে, তখন অন্য দেশগুলোও পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখায়। ফলে তাদের নাগরিকদেরও ভ্রমণ স্বাধীনতা সীমিত হয়ে পড়ে।
বিপরীতে, গত দশকে সবচেয়ে বড় উত্থান ঘটেছে চীনের। ২০১৫ সালে যেখানে চীন ছিল ৯৪তম, সেখানে ২০২৫ সালে এসে দেশটি ৬৪তম স্থানে উঠে এসেছে।
অন্যদিকে, পাসপোর্টের শক্তি কমলেও ধনী আমেরিকানদের মধ্যে ‘দ্বিতীয় নাগরিকত্ব’ বা ‘গোল্ডেন পাসপোর্ট’ প্রকল্পের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স জানিয়েছে, বর্তমানে তাদের সবচেয়ে বেশি গ্রাহক আমেরিকানরা। তারা বিনিয়োগের মাধ্যমে ইউরোপীয় বা ক্যারিবীয় পাসপোর্ট অর্জনে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ২০২৪ সালের তুলনায় ২০২৫ সালে আমেরিকানদের নাগরিকত্ব আবেদন বেড়েছে ৬৭ শতাংশ।
বিশ্বায়নের যুগে একটি অতিরিক্ত পাসপোর্ট এখন কেবল নাগরিকত্ব নয়, বরং বিলাসবহুল সম্পদে পরিণত হয়েছে। দ্রুত ভ্রমণ, বিনিয়োগ সুবিধা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা—সব মিলিয়ে ‘শক্তিশালী পাসপোর্ট’ এখন গ্লোবাল নাগরিকদের নতুন আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...