ভোরের বাণী
বিজ্ঞাপন
ইসলামি শরিয়াহ মতে, যার কাছে মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত এবং ঋণমুক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ রয়েছে, তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়। ২০২৫ সালে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্ধারিত রুপার মূল্য অনুযায়ী প্রতি ভরি সনাতন রুপার দাম ১,৭২৬ টাকা। সেই হিসাবে ৬১২.১৫ গ্রাম বা সাড়ে ৫২ ভরি রূপার মূল্য দাঁড়ায় ৯০ হাজার ৬১৫ টাকা। অর্থাৎ, যার কাছে এ পরিমাণ বা তার বেশি মূল্যমানের সম্পদ রয়েছে, তার ওপর কোরবানি করা আবশ্যক।
এখানে কোরবানির জন্য নেসাব নির্ধারণে শুধু নগদ অর্থই বিবেচ্য নয়। হিসাবযোগ্য সম্পদের মধ্যে আছে: সোনা-রুপা, অলংকার, প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমি-বাড়ি-গাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য এবং অব্যবহৃত আসবাবপত্র। তবে যেসব সম্পদ ব্যক্তি বা পরিবারের মৌলিক প্রয়োজন পূরণে ব্যবহৃত হয়, যেমন বাসস্থান, গৃহস্থালি আসবাব, ব্যবহারের পোশাক বা যানবাহন, তা নেসাবের অন্তর্ভুক্ত নয়।
কোরবানির ওয়াজিব হওয়ার জন্য এক বছর ধরে সম্পদ থাকা জরুরি নয়; বরং ১০ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত যে কোনো সময়ে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলেই তা ওয়াজিব হবে। তবে এ সময়ের রুপার বাজারমূল্যের ওপর নির্ভর করে ওয়াজিব হওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হবে, কারণ রুপার মূল্য ওঠানামা করতে পারে।
কেউ যদি ঋণগ্রস্ত হন এবং সেই ঋণ পরিশোধের পর তার সম্পদ নেসাবের নিচে নেমে যায়, তাহলে কোরবানি ওয়াজিব হবে না। তবে, ব্যবসার উদ্দেশ্যে নেওয়া ঋণ নেসাব হিসাব থেকে বাদ যাবে না। অন্যদিকে, মৌলিক প্রয়োজন পূরণে নেওয়া ঋণ (যেমন—বাড়ি নির্মাণ, চিকিৎসা বা শিক্ষা খরচ) হিসাব থেকে বাদ দেওয়া যাবে।
যাকাত ও কোরবানির নেসাবের মাঝে পার্থক্য রয়েছে। যাকাত ফরজ হয় এক বছর পর্যন্ত সম্পদ থাকার ওপর এবং নির্দিষ্ট সম্পদের ক্ষেত্রে, কিন্তু কোরবানি ওয়াজিব হয় শুধু কোরবানির সময়ের নেসাব পরিমাণ সম্পদের ভিত্তিতে, এবং মৌলিক প্রয়োজন ছাড়া সব সম্পদ এতে অন্তর্ভুক্ত হয়।
তথ্যসূত্র: বাদায়ে সানায়ে ৫/৬৪, মুলতাকাল আবহুর পৃ ৩৩৪, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ৫/২৯২, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২১, আল ফাতাওয়াল বাযযাযিয়াহ ৬/২৮৭, ফাতাওয়ায়ে ফাকিহুল মিল্লাত ১১/১৮৮-২০০)