ভোরের বাণী
ছবি : হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়
বিজ্ঞাপন
আরাফার দিনকে কেন্দ্র করে রাসূলুল্লাহ (সা.) তার বিদায়ী হজে আরাফার ময়দানে ঐতিহাসিক খুতবা প্রদান করেছিলেন, যা ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হিসেবে বিবেচিত। এই দিনটি শুধু হজযাত্রীদের জন্য নয়, বরং যারা হজে যেতে পারেননি, তাদের জন্যও অনেক বড় নিয়ামত ও সুযোগের দিন।
সহিহ মুসলিম হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “আরাফার দিনের রোজা আগের এক বছরের ও পরের এক বছরের গুনাহসমূহ মোচন করে দেয়।” (সহিহ মুসলিম: ১১৬২)। মাত্র একটি দিনের রোজা রাখার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বান্দার দুই বছরের ছোটখাটো গুনাহ ক্ষমা করে দেন—এটি একজন মুমিনের জন্য অসাধারণ সুযোগ। এটি এমন এক ফজিলতপূর্ণ দিন, যা প্রতিটি মুসলমানের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্ব পাওয়ার দাবি রাখে।
তবে যারা হজ পালন করছেন, তাদের জন্য এই দিনে রোজা রাখা মুস্তাহাব নয়। হাদিসে হজরত উম্মে ফজল (রা.) বর্ণনা করেন যে, আরাফার দিনে তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে দুধ পান করিয়েছিলেন। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, হজরত রাসূল (সা.) হজের সময় আরাফার দিনে রোজা রাখেননি (সহিহ বুখারি: ১৯৮৯)। হজযাত্রীদের জন্য বিশ্রাম নেওয়াই উত্তম, যাতে তারা আরাফার ময়দানে ইবাদত ও দোয়ার মাধ্যমে অধিক মনোযোগ দিতে পারেন।
আরাফার দিন শুধু রোজা রাখার ফজিলতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি দোয়া কবুলের সবচেয়ে উত্তম সময় হিসেবেও পরিচিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “আরাফার দিনে সর্বোত্তম দোয়া হলো— ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাই’ইন কাদির।’” (তিরমিজি: ৩৫৮৫)। এই দোয়াটি একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইবাদত, যা আরাফার দিন বারবার পড়া উচিত। কারণ হাদিসে এসেছে, এই দিনে আল্লাহ তাআলা বান্দার দোয়া কবুল করে থাকেন এবং বহু মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।
এই পবিত্র দিনে মুসলমানদের উচিত আত্মশুদ্ধির নিয়তে রোজা রাখা, বেশি বেশি ইস্তেগফার করা এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। যারা রোজা রাখতে পারছেন না, তারা অন্য নফল ইবাদতের মাধ্যমে এই দিনের বরকত অর্জনের চেষ্টা করতে পারেন। এই দিনের বিশেষ ফজিলত হলো, এটি বান্দার জন্য আল্লাহর রহমতের দরজা খুলে দেয়, যা বছরের অন্যান্য দিনের তুলনায় বহুগুণ বেশি।
আরাফার দিনের রোজা মুসলমানদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক অমূল্য উপহার। এটি এমন একটি সুযোগ, যার মাধ্যমে একজন মুমিন আল্লাহর নিকটত্ব অর্জন করতে পারে এবং তার গুনাহ মাফ করিয়ে নিতে পারে। এই ফজিলতময় দিন বছরে একবারই আসে। তাই আমাদের উচিত এই দিনের গুরুত্ব উপলব্ধি করে তা যথাযথভাবে পালন করা। রোজা, দোয়া ও ইবাদতের মাধ্যমে আমরা যেন এই দিনটির সর্বোচ্চ বরকত লাভ করতে পারি—এটাই প্রতিটি মুমিনের কামনা হওয়া উচিত।