ছবি. সংগৃহীত
বিজ্ঞাপন
ইসলামের পরিপূর্ণ রূপ তুলে ধরা সেই মহা সফর
হজ মুসলিম জীবনের এক অনন্য সাধনা। আত্মনিবেদন, ঐক্য ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটে এ সফরে। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিদায়ী হজের মাধ্যমে কেবল এই ইবাদতের মূল কাঠামোই নয়, মানবজীবনের সর্বোচ্চ আদর্শ তুলে ধরেছিলেন। তাঁর হজযাত্রা ইতিহাসে এক সোনালি অধ্যায়, যা আজও আমাদের চলার পথের দিশারী।
ইহরাম ও তালবিয়া: আনুগত্যের সাদা পোশাকে যাত্রা শুরু
নবীজি (সা.) মদিনা থেকে যাত্রা করে যুল হুলাইফা মসজিদে দু’রাকাত নামাজ আদায় করে ইহরাম বেঁধেছিলেন। সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর তালবিয়া পাঠ:
“লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক...”
তিনি উচ্চস্বরে পাঠ করেন এবং সাহাবিদেরও উৎসাহিত করেন যেন তারা জোরে জোরে পাঠ করেন—এ যেন আল্লাহর আহবানে হৃদয়ের গভীর সাড়া।
তওয়াফ ও সাঈ: ভক্তির পরম পরিক্রমা
মক্কায় প্রবেশ করে কাবা শরিফের তওয়াফ করেন নবীজি (সা.)। প্রথম তিন চক্করে তিনি রমল করেন—দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীকী প্রকাশ। এরপর সাফা-মারওয়ার মধ্য দিয়ে সাঈ করেন, আল্লাহর একত্ব ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে দোয়া করেন তিনবার।
আরাফার দিন: নবীজির (সা.) ঐতিহাসিক ভাষণ
৯ জিলহজ আরাফার ময়দানে নবীজি (সা.) তাঁর উট কাসওয়ার পিঠে বসে দেন সেই বিখ্যাত বিদায় হজের ভাষণ, যেখানে তিনি মানবাধিকার, নারীর মর্যাদা, সাম্য ও ইসলামের পরিপূর্ণতা ঘোষণা করেন:
“আজ আমি তোমাদের জন্য দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম...”
এই ভাষণ আজও বিশ্ব ইতিহাসে মানবতার শ্রেষ্ঠ দলিল।
মুজদালিফা ও মিনা: নিয়মতান্ত্রিক আমলের বাস্তব চিত্র
মুজদালিফায় রাত কাটিয়ে নবীজি (সা.) ফজরের নামাজ পড়ে মাশআরুল হারামে দোয়া করেন। এরপর মিনায় এসে কঙ্কর নিক্ষেপ করেন তিনটি জামারায়, কোরবানি দেন এবং মাথা মুন্ডন করেন। প্রতিটি ধাপ ছিল নিয়মমাফিক, সুচিন্তিত ও পরিপূর্ণ ইসলামী আদর্শে ভরপুর।
তওয়াফে জিয়ারত: হজের সমাপ্তির মহামুহূর্ত
কোরবানির দিন মিনা থেকে মক্কায় এসে আদায় করেন তওয়াফে জিয়ারত, যা হজের একটি ফরজ রোকন। এরপর পুনরায় মিনায় ফিরে যান এবং জোহরের নামাজ আদায় করেন।
হজের পথে নবীজি (সা.)-এর শিক্ষা আজও প্রাসঙ্গিক
মহানবী (সা.) তাঁর হজযাত্রার মাধ্যমে আমাদের শিখিয়ে গেছেন কিভাবে সুশৃঙ্খল, আত্মনিবেদিত ও মানবিক একটি জীবন যাপন করা যায়। তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ আমাদের জন্য দিকনির্দেশনা—একটি আদর্শিক হজ এবং আদর্শিক জীবন গঠনের ছক।