ভোরের বাণী
বিজ্ঞাপন
ভারতে ৫৪ বছর পর আবারও শুরু হচ্ছে একটি বড় পরিসরের সিভিল ডিফেন্স মহড়া, যা এর আগে মাত্র দুইবার দেখা গিয়েছিল—একবার ১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধের সময়, এবং আরেকবার ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে। চলতি বছরের ৭ মে দেশজুড়ে আয়োজিত এই মহড়াটি ব্যতিক্রমী কারণ এবার সাধারণ মানুষকেও অংশ নিতে হবে।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশের ২৪৪টি সিভিল ডিফেন্স জেলায় একযোগে মহড়া চলবে। এতে অংশ নেবেন জেলা প্রশাসক, সরকারি কর্মকর্তা, হোমগার্ড, স্বেচ্ছাসেবক, সিভিল ডিফেন্স ওয়ার্ডেন, এনসিসি ও এনএসএস সদস্য, এবং স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য, বিমান হামলা, আগুন, ব্ল্যাকআউট ও উদ্ধার অভিযানে জনসাধারণকে প্রস্তুত রাখা।
কেন এই মহড়া জরুরি?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা বর্তমানে চরমে। পেহেলগাম-কাণ্ড ও সীমান্তে প্রতিনিয়ত গুলির লড়াই—এসব পরিস্থিতিতে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও সিভিল ডিফেন্স বাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। ভারত অভিযোগ করেছে, প্রতিদিন কোনো উসকানি ছাড়াই পাকিস্তানের সেনা বিভিন্ন সেক্টরে গুলি চালাচ্ছে। এর জবাবে সীমান্তরক্ষী বাহিনী (BSF) পাল্টা ব্যবস্থা নিচ্ছে।
কী থাকবে এই মহড়ায়?
এই মহড়ায় বিমান হামলার সময় সাইরেন বাজানোর অনুশীলন, ব্ল্যাকআউট অবস্থায় কীভাবে চলাফেরা করতে হবে, কাঁচ ঢেকে রাখা, হেডলাইট আংশিক কালো করা—এসব শেখানো হবে। থাকবে কন্ট্রোল রুম ও শ্যাডো কন্ট্রোল রুম পরিচালনা, মানুষ সরিয়ে নেওয়ার অনুশীলন, এবং দমকল ও উদ্ধার কার্যক্রমের প্রস্তুতি।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য জানান, “এই মহড়ার মূল উদ্দেশ্য হলো সাধারণ মানুষকে যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি শেখানো—লাইট কখন নিভাতে হবে, কোথায় আশ্রয় নিতে হবে, এমনকি কীভাবে আগুন নেভাতে হয়।” তিনি এটাকে “সারপ্রাইজ এলিমেন্ট” হিসেবে দেখছেন, যাতে প্রতিপক্ষ দেশের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়।
সাবেক আইপিএস শান্তনু মুখোপাধ্যায় বলেন, “এটা যুদ্ধ নয়, বরং মানসিক প্রস্তুতির জন্য একটি ধাপ। মানুষ যেন বিপদের সময় ঠিকমতো কাজ করতে পারে, সেই জন্যই এই ব্যবস্থা।”
যুদ্ধ শুরু হবে কিনা, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে এমন মহড়া জনসচেতনতা ও প্রতিরক্ষার দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভারতের এই পদক্ষেপ সতর্কতার বার্তা দেয়। প্রস্তুতি থাকলে আতঙ্ক নয়, বরং আত্মবিশ্বাসে চলা সম্ভব—এটাই এই মহড়ার শিক্ষা।