Logo Logo
সাহিত্য

গরু নাকি গোরু! কোনটি সঠিক ?


Splash Image

ছবি: ভোরের বাণী গ্রাফিক্স

বাংলা ভাষায় “গরু” এবং “গোরু”—এই দুটি বানান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এক ধরনের বিভ্রান্তি চলে আসছে। এই বিতর্ক শুধু সাধারণ মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বহু শিক্ষার্থী এমনকি শিক্ষকরাও দ্বিধায় পড়েন।


বিজ্ঞাপন


তবে বাংলা একাডেমির নির্ধারিত বানান রীতি অনুযায়ী, "গরু"–ই হলো শব্দটির প্রমিত ও শুদ্ধ রূপ।

বাংলা একাডেমির প্রণীত ‘বাংলা বানান অভিধান’ থেকে জানা যায় যে, "গোরু" কথ্য রূপ হলেও বানানের দিক থেকে এটি অশুদ্ধ। একাডেমিক, সরকারি এবং সংবাদমাধ্যমের লেখায় “গরু”–ই ব্যবহারযোগ্য। এর পেছনে রয়েছে একটি ভাষাগত নিয়ম—বাংলায় অনেক সময় ‘অ’ স্বর উচ্চারণে ‘ও’ শোনালেও লিখতে হয় মূল 'অ' দিয়েই। যেমন: "বলো", "চলো", "গরু"।

ভাষাবিদদের মতে, "গরু" শব্দটি সংস্কৃত ‘গাভী’ বা ‘গোরক্ষ’ থেকে এসেছে এবং এটি একটি তদ্ভব শব্দ। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (NCTB) প্রকাশিত মাধ্যমিক স্তরের ব্যাকরণ বইতেও "গরু" শব্দটিই ব্যবহার হয়েছে।

তবে ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, “গোরু” শব্দটির ব্যবহারের নজির বাংলা সাহিত্যে বহু পুরোনো। যেমন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, চণ্ডীদাস, রবীন্দ্রনাথ সহ অনেকেই তাঁদের লেখায় “গোরু” শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এমনকি ১৯ শতকে মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখায়ও "গরুখোর" শব্দের দেখা মেলে।

একসময় বাংলা একাডেমির সাবেক সভাপতি শামসুজ্জামান খান বলেছিলেন, "বানান হিসেবে ‘গোরু’ শুদ্ধ। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিধানেও ‘গরু’ বানানকে বর্জিত বলা হয়েছে। তবে সাধারণ জনগণ যেহেতু ‘গরু’ বানানটিই গ্রহণ করছে, তাই একাডেমি ভবিষ্যতে সেটিকে বিকল্প রূপ হিসেবে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।"

এ প্রসঙ্গে আরও আলোচনায় উঠে এসেছে একাডেমির কিছু বিতর্কিত বানান পরিবর্তন, যেমন—

‘বড়’ → ‘বড়ো’, ‘ছোট’ → ‘ছোটো’, ‘নোদী’ → ‘নদী’, ‘ঈদ’ → ‘ইদ’, ‘মোরু’ → ‘মরু’, ‘তোরু’ → ‘তরু’, ‘বার’ → ‘বারো’, ‘তের’ → ‘তেরো’।

যদিও কিছু ক্ষেত্রে আগের বানানকেও বাতিল করা হয়নি, তবে এসব পরিবর্তনে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।

ভাষা বিশারদরা বলছেন, ব্যক্তিগত পছন্দ নয়—প্রমিতকরণ একটি প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া। পুরোনো সাহিত্যের উদাহরণ দিয়ে বানান নির্ধারণ করা সংগত নয়, বরং সে উদাহরণ ব্যুৎপত্তিগত আলোচনা বা ভাষার বিবর্তন বোঝাতে সহায়ক হতে পারে।

তাঁদের মতে, “গরু”–ই শুদ্ধ লেখ্য রূপ। আর উচ্চারণে “গোরু” বলাটা প্রাকৃতিক, তবে তা লিখনরীতিতে স্থান পাবে না। যেমন আমরা "নদী" বলি, কিন্তু কেউ "নোদী" লিখি না।

ভাষা পরিবর্তনশীল হলেও প্রমিত লেখার ক্ষেত্রে নির্ধারিত রীতির অনুসরণ প্রয়োজন। “গরু” শব্দটি শুধু একটি প্রাণীর নাম নয়—এটি আমাদের ভাষার শৃঙ্খলার প্রতীক। তাই এখন থেকে সচেতনভাবে “গরু” বানান ব্যবহার করা জরুরি বলে মনে করেন অনেকেই।

আরও পড়ুন

ত্রাণ মজুত, তবুও নেই সহায়তা : ঝড়-বৃষ্টিতে ভাঙা ঘরে বৃদ্ধ দম্পতির মানবেতর জীবন-যাপন
ত্রাণ মজুত, তবুও নেই সহায়তা : ঝড়-বৃষ্টিতে ভাঙা ঘরে বৃদ্ধ দম্পতির মানবেতর জীবন-যাপন
ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হোক ব্যক্তি ও সমাজ, ঈদুল আজহায় এনসিপির শুভেচ্ছা বার্তা
ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হোক ব্যক্তি ও সমাজ, ঈদুল আজহায় এনসিপির শুভেচ্ছা বার্তা