Logo Logo
জাতীয়

ঈদের আনন্দ যেন না হয় রক্তাক্ত — কোরবানির সময় এই ৫টি ভুল করবেন না!


Splash Image

কোরবানির ঈদ মুসলিমদের জন্য অন্যতম আনন্দঘন একটি দিন। পশু কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি পরিবার-পরিজন নিয়ে উদ্‌যাপন চলে দিনভর।


বিজ্ঞাপন


কিন্তু এই উৎসবের মাঝেও প্রতিবারই ছায়ার মতো হাজির হয় দুর্ঘটনা। জবাইয়ের সময় ছুরিকাঘাতে আহত হওয়া, পশুর আঘাতে মৃত্যু, কিংবা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারানো—এইসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন কোরবানির দিনের অশুভ ছায়া হয়ে উঠেছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, কোরবানির দিনে দুর্ঘটনার হার সবচেয়ে বেশি দেখা যায় সকাল থেকে দুপুরের মধ্যবর্তী সময়ে। ঢাকার বড় বড় হাসপাতালগুলোতে প্রতিবছর ঈদের দিনই আহত রোগীর উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। চিকিৎসকদের মতে, এইসব দুর্ঘটনার প্রায় ৮০ শতাংশই এড়ানো সম্ভব যদি সাধারণ কিছু নিরাপত্তা নির্দেশনা মানা হতো।

প্রথমত, ধারালো অস্ত্র ব্যবহারে অসতর্কতা অন্যতম প্রধান দুর্ঘটনার কারণ। পেশাদার কসাই না হওয়ায় অনেকেই পশু জবাইয়ের সময় নিজেরা আহত হন, এমনকি আশপাশের মানুষদেরও ক্ষতিগ্রস্ত করেন। ২০১৯ সালে মাদারীপুরে এমন এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় ১০ বছরের শিশু মৌমিতা আক্তার। কসাইয়ের হাত থেকে ছুরি ছুটে গিয়ে শিশুটির পেটে ঢুকে যায়, এবং তাৎক্ষণিক মৃত্যু ঘটে তার। একইভাবে ২০২১ সালে গাজীপুরে মাংস কাটার সময় নিজের হাতে থাকা ছুরি বুকে বিদ্ধ হয়ে এক কসাইয়ের মৃত্যু হয়, যখন বসার টুল থেকে পড়ে যান তিনি।

দ্বিতীয়ত, পশুর দড়ি ছিঁড়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও প্রাণঘাতী রূপ নিতে পারে। ভয় পেয়ে বিশাল গরু বা ষাঁড় যখন জনবহুল রাস্তায় দৌড়ায়, তখন সাধারণ মানুষ, শিশু, এমনকি চালকরাও পড়ে যান আতঙ্কে। এতে সড়ক দুর্ঘটনা, ভিড়ে পদদলিত হওয়া কিংবা গরুর শিংয়ের আঘাতে গুরুতর জখম হওয়ার ঘটনা বারবার দেখা যায়।

তৃতীয়ত, বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রপাতির ব্যবহারে সচেতনতার অভাবও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। অনেকেই বৃষ্টির দিনে ভেজা পরিবেশে বা বৈদ্যুতিক তারের কাছাকাছি জায়গায় পশু জবাই করেন। কেউ কেউ ব্যবহার করেন ইলেকট্রিক মাংস কাঁটার যন্ত্র, যা ভেজা অবস্থায় ছুঁলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে যায়। আগে থেকেই জায়গাটি নিরাপদ কি না, বৈদ্যুতিক সংযোগ আছে কি না—এইসব বিষয় একবার যাচাই না করায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

এছাড়াও কসাইয়ের অদক্ষতা কিংবা অসাবধানতাও বড় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, সঠিকভাবে দড়ি না বাঁধায় পশু জবাইয়ের সময় ছুটে গিয়ে আশপাশে থাকা মানুষকে আঘাত করে। আবার হাড় কাটতে গিয়ে বা মাংস টুকরো করার সময় হাত থেকে ছুরি ছুটে গিয়ে নিজের বা অন্য কারও শরীরে ঢুকে পড়ে। এই ধরনের দুর্ঘটনার জন্য দায়ী মূলত অভিজ্ঞতা ও সতর্কতার অভাব।

তবে এসব দুর্ঘটনা পুরোপুরি এড়ানো সম্ভব কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললেই। যেমন, অবশ্যই অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত কসাই ব্যবহার করা উচিত। জবাইয়ের সময় শিশু ও বৃদ্ধদের দূরে সরিয়ে রাখা, খোলা ও শুকনো জায়গা বেছে নেওয়া, বৈদ্যুতিক তার ও যন্ত্রপাতি থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা, পশুর দড়ি ও বাঁধার খুঁটি ভালোভাবে পরীক্ষা করা এবং আশপাশের পরিবেশ শান্ত রাখা—এই সাধারণ বিষয়গুলোই রক্ষা করতে পারে বহু প্রাণ।

এক নজরে কোরবানির ঈদে কীভাবে এড়াবেন এসব বিপদ?

🟢 অভিজ্ঞ কসাই নিয়োগ করুন – আত্মীয় বা পাড়ার কোনো অনভিজ্ঞকে দিয়ে না করে পেশাদারকে দায়িত্ব দিন।

🟢 শিশু ও বয়স্কদের দূরে রাখুন – কোরবানির সময় তাদের নিরাপদ দূরত্বে রাখুন।

🟢 পরিচ্ছন্ন, খোলা জায়গা বেছে নিন – যেখানে পানি জমে না, বৈদ্যুতিক তার বা ক্যাবল নেই।

🟢 পশুর দড়ি ঠিকভাবে বাঁধা হচ্ছে কিনা তা যাচাই করুন – প্রয়োজন হলে দ্বিগুণ সুরক্ষা ব্যবস্থা নিন।

🟢 সবাইকে শান্ত রাখুন – হুড়োহুড়ি বা আতঙ্ক সৃষ্টি যেন না হয়।

🟢 বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্র সাবধানে ব্যবহার করুন – ভেজা জায়গায় এসব যন্ত্র একেবারেই ব্যবহার করবেন না।

ঈদ মানেই শুধুই পশু কোরবানি নয়, বরং ভালোবাসা, নিরাপত্তা, ও পরিবারের সঙ্গে হাসিখুশি সময় কাটানো। কিন্তু সামান্য অসচেতনতা এই আনন্দকে কান্নায় রূপ দিতে পারে। তাই পশু কেনার পাশাপাশি এবার কোরবানির প্রস্তুতিতে নিরাপত্তাকেও অগ্রাধিকার দিন। সচেতনতা দিয়েই গড়া হোক এবারের ঈদ—নিরাপদ, নির্মল আর নিঃশঙ্ক আনন্দে ভরা।

আসুন, সামান্য সচেতনতায় গড়ে তুলি নিরাপদ ঈদ। সবার ঈদ হোক আনন্দময়, দুর্ঘটনামুক্ত।

আরও পড়ুন

ত্রাণ মজুত, তবুও নেই সহায়তা : ঝড়-বৃষ্টিতে ভাঙা ঘরে বৃদ্ধ দম্পতির মানবেতর জীবন-যাপন
ত্রাণ মজুত, তবুও নেই সহায়তা : ঝড়-বৃষ্টিতে ভাঙা ঘরে বৃদ্ধ দম্পতির মানবেতর জীবন-যাপন
ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হোক ব্যক্তি ও সমাজ, ঈদুল আজহায় এনসিপির শুভেচ্ছা বার্তা
ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হোক ব্যক্তি ও সমাজ, ঈদুল আজহায় এনসিপির শুভেচ্ছা বার্তা