Logo Logo
ইসলাম
৩০ মে ২০২৫ | ৩ জিলহজ ১৪৪৬ হিজরি | পবিত্র কাবা শরিফে প্রদত্ত জুমার খুতবা

জিলহজের দিনগুলো: বরকত, রহমত ও ইবাদতের শ্রেষ্ঠ সময়


Splash Image

ছবি: শায়খ ড. মাহের বিন হামদ আল মুআইকিলি, সংগৃহীত

প্রখ্যাত ইমাম ও খতিব শায়খ ড. মাহের বিন হামাদ আল মুআইকিলির খুতবা থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ


বিজ্ঞাপন


হজযাত্রীদের জন্য শুভ সংবাদ

প্রিয় হজযাত্রীরা! আপনারা আল্লাহর ডাকের জবাব দিয়ে হজের উদ্দেশ্যে পবিত্র ভূমিতে উপস্থিত হয়েছেন—এটা আপনাদের জন্য এক মহান সৌভাগ্য ও মর্যাদা। এই ভূমি—যেখানে রয়েছে কাবা শরিফ, মাকামে ইবরাহিম, হজরে আসওয়াদ, জমজম কূপ এবং মুলতাজাম—তা শুধু পবিত্রতা ও ইতিহাসের প্রতীকই নয়, বরং এখানেই মানুষের গুনাহ মাফ হয়, হৃদয় নরম হয়, আর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়।

আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি—তিনি যেন আপনাদের হজ কবুল করেন, আপনাদের সব আমল বরকতময় করেন এবং আপনাদের ফিরে যান পূর্ণ ক্ষমার সৌভাগ্য নিয়ে।

দ্বীনের নিদর্শনসমূহের মর্যাদা

আল্লাহ নিজেই তাঁর দ্বীনকে সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। এই সংরক্ষণের একটি বড় মাধ্যম হলো—দ্বীনের চিহ্ন ও নিদর্শনসমূহের সম্মান ও রক্ষণাবেক্ষণ।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন:

“যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে, তা তার অন্তরের তাকওয়ার প্রকাশ।”

(সূরা হজ, আয়াত: ৩২)

নামাজ, আযান, যাকাত, রোযা, হজ ও উমরাহ—এসবই ইসলামের বড় বড় নিদর্শন। এগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে আমাদের ঈমান ও আল্লাহভীতি প্রকাশ পায়।

পবিত্র স্থানগুলোর মাহাত্ম্য

মক্কা শরিফ ও তার আশপাশের স্থান যেমন—আরাফাত, মুজদালিফা, মিনা, সাফা-মারওয়া—এগুলো সবই ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। বিশেষত কাবা শরিফ, যা আল্লাহর ঘর হিসেবে শ্রেষ্ঠতম মর্যাদা লাভ করেছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

“আমার গৃহকে পবিত্র রেখো—তাদের জন্য যারা তাওয়াফ করে, নামাজে দাঁড়ায়, রুকু ও সিজদা করে।”

(সূরা হজ, আয়াত: ২৬)

হাদীসেও এসেছে, এই কাবার আশপাশে গুনাহ যেমন ভয়াবহ, তেমনি সওয়াবও বহুগুণ। এখানে একটি নামাজ অন্য জায়গায় এক লাখ নামাজের সমান।

মক্কার চিরস্থায়ী মর্যাদা

রাসুলুল্লাহ ﷺ ঘোষণা করেছেন:

“আল্লাহ যেদিন আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, সেদিন থেকেই মক্কাকে পবিত্র করেছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা পবিত্র থাকবে।...”

(সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৩১৩)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:

“নিশ্চয়ই মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে গৃহ স্থাপন করা হয়েছিল, তা ছিল মক্কায়—বরকতময় ও সমগ্র জগতের জন্য দিশারী।”

(সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯৬)

আরাফার দিনের গুরুত্ব

আরাফার দিন ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এ দিন হযরত আদম (আ.)-এর সব সন্তানের কাছ থেকে আল্লাহ অঙ্গীকার নিয়েছিলেন। হাদিসে বর্ণিত আছে, এদিন আল্লাহ জাহান্নাম থেকে সর্বাধিক মানুষকে মুক্তি দেন।

প্রিয়নবী ﷺ বলেছেন:

“আমি আশা করি, আরাফার দিনের রোযা আগের এক বছরের ও পরের এক বছরের গুনাহ মাফ করায়।”

(সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৩৬)

জিলহজের প্রথম দশ দিন: ইবাদতের শ্রেষ্ঠ সময়

আল্লাহ কুরআনে এই দিনগুলোর শপথ করেছেন:

“শপথ ফজরের এবং শপথ দশ রাতের।”

(সূরা ফজর, আয়াত: ১-২)

এই দশদিনে এমন কিছু ইবাদত করা যায় যা বছরের অন্য কোনো সময় একসঙ্গে হয় না।

রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন:

“জিলহজের প্রথম দশ দিনে আমলের চেয়ে উত্তম কোনো আমল বছরের অন্য সময় করা যায় না—even জিহাদ নয়, যদি না কেউ নিজের জান-মাল দিয়ে বেরিয়ে আর কিছু নিয়ে ফিরে না আসে।”

(সহিহ বুখারি, হাদিস: ৯৬৯)

এই দশদিনে ভালো কাজ যেমন—নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, দান-সদকা, রোযা, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা—সবকিছুর সওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।

হজ: সর্বোচ্চ আমল ও জান্নাতের পথে

নবী ﷺ বলেছেন:

“এক উমরাহ থেকে আরেক উমরাহ পর্যন্ত সময়ের গুনাহ মাফ হয়ে যায়। আর মাবরুর হজের প্রতিদান তো শুধুই জান্নাত।”

(সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৩১৮০)

মাবরুর হজের শর্ত হলো—খালিস নিয়ত, আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পালন, এবং রাসুলের সুন্নাহ মোতাবেক সম্পন্ন করা।

আল্লাহ বলেন:

“তোমার নিকট লোকেরা হজের জন্য আসবে দূর-দূরান্ত থেকে, যাতে তারা তাদের উপকার লাভ করতে পারে ও নির্ধারিত সময়ে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে...”

(সূরা হজ, আয়াত: ২৭-২৯)

হজ: শৃঙ্খলা ও দায়িত্বের শিক্ষা

হজ এমন একটি ইবাদত, যার প্রতিটি রোকন, ওয়াজিব, শর্ত ও সময় নির্ধারিত। এটি শিখিয়ে দেয় শৃঙ্খলা, কর্তব্যবোধ ও একতা।

ইসলাম শুধু ইবাদতের নয়, বরং গোটা জীবনের শৃঙ্খলিত ও নৈতিক ব্যবস্থাপনা দিয়েছে। হজের প্রতিটি ধাপ আমাদের জীবন পরিচালনায় এক অনন্য পাঠ।

সৌদি সরকারের উদ্যোগ ও দায়িত্ব

সৌদি আরব সরকার হজযাত্রীদের নিরাপত্তা, সেবা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই হজের জন্য অনুমতি (পারমিট) ছাড়া অংশ নেওয়া বিধিবহির্ভূত এবং ব্যবস্থাপনার জন্য হুমকি স্বরূপ।

সবাইকে উচিত সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করা, বিশৃঙ্খলা না করা, অন্যদের ভোগান্তি না বাড়ানো এবং হজের মূল শিক্ষা—ধৈর্য, সহানুভূতি ও আনুগত্য—প্রয়োগে সচেষ্ট থাকা।

আল্লাহ আমাদের সকলকে জিলহজের বরকতপূর্ণ দিনগুলোতে ইবাদতের মাধ্যমে নিজ সন্তুষ্টি অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

-অনুবাদ: আবদুল কাইয়ুম শেখ

মুহাদ্দিস,জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ, পোস্তা, চকবাজার, ঢাকা-১২১১।

আরও পড়ুন

ত্রাণ মজুত, তবুও নেই সহায়তা : ঝড়-বৃষ্টিতে ভাঙা ঘরে বৃদ্ধ দম্পতির মানবেতর জীবন-যাপন
ত্রাণ মজুত, তবুও নেই সহায়তা : ঝড়-বৃষ্টিতে ভাঙা ঘরে বৃদ্ধ দম্পতির মানবেতর জীবন-যাপন
ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হোক ব্যক্তি ও সমাজ, ঈদুল আজহায় এনসিপির শুভেচ্ছা বার্তা
ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হোক ব্যক্তি ও সমাজ, ঈদুল আজহায় এনসিপির শুভেচ্ছা বার্তা