বিজ্ঞাপন
ঈদুল আজহা আমাদের মনে করিয়ে দেয় শৈশবের স্মৃতি, পরিবারের সঙ্গে কাটানো আনন্দঘন মুহূর্তগুলোর কথা। তবে বর্তমান সময়ে আমরা কতটুকু উপভোগ করছি এই ঈদ? প্রচলিত কোরবানির মধ্য দিয়ে কি আদৌ ঈদের প্রকৃত উদ্দেশ্য পূরণ হচ্ছে? বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের অনুভূতি ও ভাবনার কথা জানিয়েছেন।
ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. বিপ্লব বলেন,
"বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে ঈদুল আজহা আমাদের কাছে কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়; বরং পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটানোর এক বিশেষ উপলক্ষ। ত্যাগের মহিমায় ভরা এই দিনে অনেকেই আপন ঠিকানায় ফিরছেন, আবার কেউ কেউ বাস্তবতার কারণে ক্যাম্পাসেই ঈদ উদযাপনের পরিকল্পনা করছেন।
এসবের মাঝেও আশার আলো ছড়িয়ে পড়ছে। মানুষ মানুষকে সহায়তা করছে, আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। দরিদ্র ও অসহায় মানুষের মুখে একটুখানি হাসি ফোটানোর চেষ্টায় ঈদের প্রকৃত মহিমা আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। এই সম্প্রীতি, ত্যাগ ও ভালোবাসার শিক্ষা থেকেই গড়ে উঠুক এমন একটি সমাজ, যেখানে বস্তুবাদ নয়—মানবিকতা ও সহানুভূতির বন্ধন হবে প্রধান ভিত্তি।"
আইন বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী কাজী গালিব বলেন,
"ঈদুল আজহা একটি পবিত্র ত্যাগের উৎসব, যার শিকড় প্রোথিত আছে হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগে। একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর দৃষ্টিতে এই ঈদ কেবল ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং আত্মসংযম, মানবিকতা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার বাস্তব অনুশীলন।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ঈদ মানেই প্রিয়জনের অভাববোধ, আবার একই সঙ্গে এক নতুন উপলব্ধিরও সুযোগ। এই উপলব্ধি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, কোরবানির প্রকৃত অর্থ কেবল পশু জবাই নয়—বরং অহংকার, হিংসা, লোভ ও স্বার্থপরতা থেকে নিজেকে মুক্ত করাও এক ধরণের কোরবানি।
হলে থাকা শিক্ষার্থীদের কাছে ঈদ মানে বন্ধুত্ব, ভাগাভাগি আর সহানুভূতির প্রতীক। ঈদের মাংস বিতরণ শুধু দান নয়, বরং এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে শেখায়। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে যদি আমরা এই শিক্ষাকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারি, তবে সমাজ হবে আরও সহনশীল, উদার ও ন্যায়ের পথের অনুসারী।"
লোকপ্রশাসন বিভাগের ২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ জিসান বলেন,
"ঈদুল আজহা আমাদের ত্যাগের মহিমায় উদ্বুদ্ধ করে। এর মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য আত্মত্যাগের মানসিকতা গড়ে তোলা। আমরা যেন শুধু পশু নয়, মনের পশুকেও কোরবানি করতে পারি—আল্লাহ আমাদের সেই তৌফিক দিন।"
সোশিয়োলজি বিভাগের ২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাফিস মোহাম্মদ মিকাইল বলেন,
"প্রচলিত নিয়ম অনুসরণ করে কেবল কোরবানি করলেই ঈদের উদ্দেশ্য পূরণ হয় না। বরং, আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে লুকিয়ে থাকা লোভ, অহংকার, হিংসা ও খারাপ প্রবৃত্তিকেও কোরবানির মাধ্যমে পরিশুদ্ধ করতে হবে। কোরবানির প্রকৃত শিক্ষা আত্মশুদ্ধির মধ্যেই নিহিত।
-মো. আশিকুল ইসলাম, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি