Logo Logo
ফিচার

নীল রক্তের ‘জীবন্ত জীবাশ্ম’, প্রাণ বাঁচায় লাখো মানুষের


ভোরের বাণী

Splash Image


বিজ্ঞাপন


নীল রঙের রক্ত, চোখ ১০টি, আর এক লিটার রক্তের দাম প্রায় ১৫ লাখ টাকা! প্রথম শুনলে যেন রূপকথার গল্প মনে হয়। কিন্তু এটাই বাস্তব। এই বিরল ও রহস্যময় প্রাণীর নাম হর্সশু ক্র্যাব, যা চিকিৎসা বিজ্ঞান ও ওষুধ শিল্পে এক অনন্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত।

হর্সশু ক্র্যাব আদতে কোনো সাধারণ কাঁকড়া নয়। এর গঠন অনেকটা ট্যাংকের মতো এবং এটি প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে প্রায় অপরিবর্তিত অবস্থায় টিকে আছে। বিজ্ঞানীরা একে বলেন “জীবন্ত জীবাশ্ম”। ডায়নোসরদের আগেও যারা পৃথিবীতে ছিল, সেই প্রাণীদের উত্তরসূরি এই হর্সশু ক্র্যাব। এদের দেহে রয়েছে দুটি বড় চোখ ছাড়াও আরও আটটি ছোট চোখ, যেগুলো আলোর উৎস শনাক্ত করতে সাহায্য করে।

এই কাঁকড়ার একটি বিশেষ দিক হলো এর রক্ত। মানুষের রক্তে অক্সিজেন বহনের কাজ করে হিমোগ্লোবিন, যার ভিত্তি লোহা—ফলে রক্ত হয় লাল। অপরদিকে, হর্সশু ক্র্যাবের রক্তে থাকে হেমোসায়ানিন, একটি তামা-ভিত্তিক প্রোটিন, যা রক্তকে দেয় নীল রং।

কিন্তু রক্ত শুধু রঙেই আলাদা নয়, এর ভেতরে আছে আশ্চর্য এক উপাদান—“লিমুলাস অ্যামেবোসাইট লাইসেট” বা এলএএল। এই উপাদান অত্যন্ত সংবেদনশীলভাবে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি শনাক্ত করতে পারে। ১৯৭০ সালের পর থেকে এই উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে পাইরোজেন টেস্টের বিকল্প হিসেবে।

বিশেষত করোনাভাইরাস মহামারির সময়, যখন বিশ্বজুড়ে দ্রুত ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চলছিল, তখন এই কাঁকড়ার রক্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। প্রতিটি ভ্যাকসিনের ব্যাচ মানব শরীরে ব্যবহারের আগে এর মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়, যাতে কোনো ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া (এন্ডোটক্সিন) না থাকে। শুধু ভ্যাকসিন নয়, অনেক জটিল ওষুধ তৈরিতেও এই রক্ত অপরিহার্য উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

বর্তমানে একটি লিটার হর্সশু ক্র্যাবের রক্তের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে ১৫ হাজার মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৫ লাখ টাকার সমান। এই চাহিদার কারণে আমেরিকা ও এশিয়ার উপকূলবর্তী অঞ্চলে এই কাঁকড়ার সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে।

এদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন পরিবেশ সংরক্ষণ ও সঠিক নিয়মে রক্ত সংগ্রহ। হর্সশু ক্র্যাবের প্রাকৃতিক আবাসস্থল যেমন নদীমুখ, জোয়ারের এলাকা রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। গবেষকরা এর রক্তের বিকল্প রাসায়নিক তৈরি করতেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, যাতে এই প্রাণীর উপর নির্ভরতা কমে।

এই অনন্য প্রাণী শুধু চিকিৎসার জন্য নয়, জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষাতেও গুরুত্বপূর্ণ। তাই হর্সশু ক্র্যাব সংরক্ষণে আমাদের সবার উচিত সচেতন হওয়া।

আরও পড়ুন

ত্রাণ মজুত, তবুও নেই সহায়তা : ঝড়-বৃষ্টিতে ভাঙা ঘরে বৃদ্ধ দম্পতির মানবেতর জীবন-যাপন
ত্রাণ মজুত, তবুও নেই সহায়তা : ঝড়-বৃষ্টিতে ভাঙা ঘরে বৃদ্ধ দম্পতির মানবেতর জীবন-যাপন
ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হোক ব্যক্তি ও সমাজ, ঈদুল আজহায় এনসিপির শুভেচ্ছা বার্তা
ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হোক ব্যক্তি ও সমাজ, ঈদুল আজহায় এনসিপির শুভেচ্ছা বার্তা