ভোরের বাণী
বিজ্ঞাপন
ফেব্রুয়ারিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬.৮২ শতাংশ, যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই স্থবিরতা মূলত রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা থেকেই উৎসারিত।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষে দেশে বেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখে, যা আগের বছরের তুলনায় ১.৫ লাখ বেশি। বিনিয়োগে মন্দা ও রাজনৈতিক স্থবিরতা এই বেকারত্ব বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং এডিবি-এর মতো দাতা সংস্থাগুলো বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ থেকে ৩.৯ শতাংশের মধ্যে হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। বাস্তবতাও তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ। তিনি বলেন, ‘দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও প্রবৃদ্ধি যথাযথ মনোযোগ পাচ্ছে না, ফলে সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে।’
একইসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এপ্রিল ২০২৪ শেষে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯.১৭ শতাংশ। মার্চে এটি ছিল ৯.৩৫ শতাংশ, তবে বছরজুড়ে ৯ শতাংশের উপরে অবস্থান করছে, যা নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় কষাঘাত হানছে।
রপ্তানির ক্ষেত্রেও দেখা দিচ্ছে নতুন চ্যালেঞ্জ। ভারতের বিধিনিষেধ ও যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের চাপ বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার দিক থেকে দুর্বল করে দিচ্ছে। এর মধ্যেই ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের অস্বাভাবিক উর্ধ্বগতি স্পষ্ট করে দিচ্ছে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা। ডিসেম্বর ২০২৪ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে, যা তিন মাস আগের তুলনায় প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বেশি।
তবে অন্ধকারে কিছু আশার আলোও রয়েছে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত মাসিক রেমিট্যান্স ধারাবাহিকভাবে ২০০ কোটির ওপরে রয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো জানায়, জুলাই-এপ্রিল সময়ে রপ্তানি আয় ৪০.২০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ বেশি।
অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘বিনিয়োগ স্থবিরতার পেছনে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা মুখ্য। স্থিতিশীলতা ফিরলে সংকট সাময়িক প্রমাণিত হবে।’ আর ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া অর্থনৈতিক সংস্কার এবং পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়।’
অর্থনৈতিক সংকট সমাধানে প্রয়োজন সাহসী কাঠামোগত সংস্কার, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং স্থায়ীভাবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ। নইলে অর্থনীতি আরও গভীর সংকটে পড়ার শঙ্কা থেকেই যাবে।