বিজ্ঞাপন
সরকার ও বিএনপির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৩১ আগস্ট রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির বৈঠকে এ প্রস্তাব তোলা হয়। বৈঠকে সরকারের এক উপদেষ্টা বিএনপিকে পিআর পদ্ধতি মানতে অনুরোধ জানালেও দলটির নেতারা জানান, সাংবিধানিক বৈধতা থাকলে কেবল তখনই এ ধরনের পরিবর্তন সম্ভব।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনে ঐকমত্য হলেও উচ্চকক্ষের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে মতভিন্নতা রয়েছে। কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, ১০০ সদস্যের উচ্চকক্ষ নিম্নকক্ষে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে গঠিত হবে। কিন্তু বিএনপি ও এনডিএম চাইছে, নিম্নকক্ষে একটি দল যত আসন পাবে তার ভিত্তিতেই উচ্চকক্ষে আসন বণ্টন হোক।
বিএনপির দাবি, অন্যথায় উচ্চকক্ষ অর্থহীন হয়ে পড়বে। তবে সংশ্লিষ্টদের মতে, আসন-ভিত্তিক পদ্ধতিতে গঠন করলে উচ্চকক্ষ নিম্নকক্ষের প্রতিচ্ছবিতে পরিণত হবে এবং এর মূল উদ্দেশ্য পূরণ হবে না।
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ প্রকট হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অভিযোগ করছে, সরকারের প্রকাশিত ঘোষণাপত্রে বিএনপির চাওয়াকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তারা চাইছে, কমিশনের সংখ্যাগরিষ্ঠ সিদ্ধান্ত মেনে জাতীয় নির্বাচনের আগেই সনদ বাস্তবায়ন হোক।
অন্যদিকে বিএনপি বলছে, সংসদ ছাড়া সাংবিধানিক পরিবর্তনের কোনো বৈধ পথ নেই। তাদের প্রস্তাব, আগামী সংসদ গঠনের দুই বছরের মধ্যে সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে।
জামায়াত চায় গণভোট অথবা রাষ্ট্রপতির প্রক্লেমেশনের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়ন হোক। এনসিপি লিখিতভাবে জানিয়েছে, এ জন্য গণপরিষদ গঠন আবশ্যক। তবে বিএনপি এসব প্রস্তাবে রাজি নয়। ফলে নির্বাচনের আগেই সনদ ঝুলে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, ভিন্নমত নিরসনে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, “উচ্চকক্ষ গঠনের পদ্ধতিসহ যেসব সিদ্ধান্তে মতভিন্নতা আছে, সেগুলোতে গণভোটের মতো পদ্ধতিও বিবেচনায় আনা হতে পারে।”
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, একক কক্ষবিশিষ্ট সংসদে পর্যাপ্ত বিতর্ক ও পর্যালোচনা ছাড়াই আইন পাস হয়েছে। ফলে শাসক দলের একচ্ছত্র ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণেই ‘অতিরিক্ত তত্ত্বাবধায়নমূলক স্তর’ হিসেবে উচ্চকক্ষের প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে ভারসাম্য রক্ষা হয় এবং এককভাবে সংবিধান সংশোধনের সুযোগ কমে আসে।
বিএনপি তাদের ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবেও উচ্চকক্ষের কথা উল্লেখ করেছে। তবে দলটির মতে, এখানে সমাজের প্রথিতযশা ব্যক্তিদের স্থান দেওয়া উচিত। স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সম্প্রতি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য ভারসাম্যের চেয়ে বরং সমাজের বিশিষ্টজনদের ভূমিকা নিশ্চিত করা।”
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমদ বলেন, “উচ্চকক্ষকে ভোটের অনুপাতে গঠনের প্রস্তাব যৌক্তিক। এতে কোনো দলের একক আধিপত্য থাকবে না। বিএনপির আসন-ভিত্তিক প্রস্তাব অযৌক্তিক, এতে উচ্চকক্ষ কার্যত নিম্নকক্ষের প্রতিলিপি হয়ে পড়বে।”
সব মিলিয়ে, উচ্চকক্ষ গঠন ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত ক্রমেই বাড়ছে। এর ফলে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে সংস্কার বাস্তবায়ন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...