Logo Logo

ববিতে কাশফুলের সৌন্দর্যের আড়ালে অনুন্নয়ন ও সংকট


Splash Image

বরিশালের মায়াবী নদী কীর্তনখোলার তীর ঘেঁষে অবস্থিত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) ক্যাম্পাস শরতের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যে অমলিন। চোখজুড়ানো লাল ইটের দালানগুলোর প্রান্তে প্রান্তে সাদা কাশফুল বাতাসে দুলছে। মনে হবে আসমান থেকে মেঘের দল নেমে এসেছে ৫০ একরের প্রাঙ্গণে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠজুড়ে দুলছে কাশফুলের ঢেউ, যেখানে শিক্ষার্থী, স্থানীয় মানুষ ও দূর থেকে আগত দর্শনার্থীরা কেউ ছবি তুলছেন, কেউ হারিয়ে যাচ্ছেন প্রকৃতির সৌন্দর্যে।


বিজ্ঞাপন


তবে এই মনোরম দৃশ্যের আড়ালে লুকিয়ে আছে দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময়ের অনুন্নয়ন ও অব্যবস্থাপনা। শিক্ষার্থীরা জানান, প্রতিবছরই প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে নতুন রূপে সাজে ক্যাম্পাস। প্রতিবার শরতে কাশফুল ফুটে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ বছর পেরোলে ও বাস্তব উন্নয়ন হয়নি। তারা আক্ষেপ করে বলেন, “প্রকৃতি উদার হলেও বাস্তবতা খুবই কঠিন। কাশফুলে সাজানো এই সুন্দর প্রাঙ্গনের গভীরে লুকিয়ে আছে হাজারো শিক্ষার্থীর এক দীর্ঘশ্বাস, অবহেলা, অনুন্নয়ন, নিঃশব্দ যন্ত্রণা আর অপেক্ষা।”

সরেজমিন দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘেঁষে বিস্তীর্ণ এলাকা অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে। এই খালি জায়গাগুলোতে কাশফুল জন্মালেও, আড়ালে রয়েছে অব্যবস্থাপনা ও অনুন্নয়নের চিত্র। হাতে গোনা কয়েকটি ভবন ছাড়া অন্য কোনো স্থাপত্য নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ছোট-বড় প্রায় ১১টি ডোবা রয়েছে, যেখানে জমে থাকে নোংরা পানি, আবর্জনা ও জলজ আগাছা। এছাড়া তিনটি বড় পুকুরের মধ্যে দুটির অবস্থা বেহাল। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এসব জলাশয় হারাতে বসেছে তাদের প্রাকৃতিক রূপ ও কার্যকারিতা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললে জানা যায়, প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরেও পর্যাপ্ত উন্নয়ন হয়নি। চারদিকে শুধু সংকট আর সংকট। পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় ৮২ শতাংশ শিক্ষার্থী বাধ্য হয়ে শহরের বিভিন্ন মেসে থাকতে হচ্ছে। পর্যাপ্ত পরিবহন সুবিধাও নেই। একাডেমিক কার্যক্রমও ভঙ্গুর। ২৫টি বিভাগের জন্য মাত্র ৩৬টি ক্লাসরুম বরাদ্দ। একটি বিভাগের ছয়-সাত ব্যাচের জন্য মাত্র এক ক্লাসরুম আছে। শিক্ষক ও ডিনদের বসার জায়গাও নেই।

বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী মুয়াদ হোসেন সাগর বলেন, “প্রতিদিন কাশফুলের সৌন্দর্য দেখি, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভঙ্গুর অবস্থা দেখলে মন খারাপ হয়। ভবন নেই, গবেষণার সুযোগ নেই, পর্যাপ্ত ল্যাব নেই। ভর্তি হবার পর থেকে কোনো উন্নয়ন দেখছি না। ভিসিরা শুধু আশা দিয়েছেন, বাস্তবে কোনো উন্নয়ন পাইনি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের প্রভাষক ও সিন্ডিকেট সদস্য মো. মোস্তাকিম রহমান জানান, “বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ক্লাসরুমের চরম সংকট বিরাজ করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উদ্যোগের অভাব। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব সংকট মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেওয়া হলেও এখানে তেমন কিছু হয় না। দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের অপেক্ষায় থেকে ভোগান্তি পোহানোর যৌক্তিকতা নেই। টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট নিয়োগ, ভাড়া ভবন বা অস্থায়ী ক্লাসরুমের মতো বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। অবহেলা আর উদ্যোগের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয় তলিয়ে যাচ্ছে, আর উপর থেকে আমরা সবাই কাশফুল দেখছি। এগুলো হলো অনুন্নয়নের ফলে গজানো আগাছা, যা সৌন্দর্য বিলাচ্ছে। এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক সংকট ও রক্ষণাবেক্ষণের চিত্র তুলে ধরে।”

সংক্ষেপে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কাশফুলে মোড়া দৃশ্য শিক্ষার্থীদের মন জুড়ালেও, সেই সৌন্দর্যের আড়ালে লুকিয়ে আছে দীর্ঘমেয়াদি অনুন্নয়ন, অব্যবস্থাপনা ও শিক্ষার্থীদের নানা ভোগান্তি।

প্রতিবেদক- মোঃ আশিকুল ইসলাম, ববি প্রতিনিধি।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...