Logo Logo
ক্যাম্পাস

ছাত্রদল পরিচয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিকাকে হুমকি, প্রমাণ মেলেনি ছাত্রত্বের


Splash Image

ছাত্রদল পরিচয়ে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষিকাকে সহযোগিতা করার আশ্বাস ও পরবর্তীতে হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।


বিজ্ঞাপন


আল রিয়াদ নামের ওই শিক্ষার্থীকে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী বলা হলেও বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। রিয়াদকে বহিরাগত দাবি করেছেন তারা।

জানা গেছে, আল রিয়াদ সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২৪ ব্যাচের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রদল কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতেন। সম্প্রতি তার একটি হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথনের স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়। সেখানে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুক্তভোগী শিক্ষিকাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, 'ম্যাডাম আমি হাবিপ্রবি ছাত্রদল থেকে বলছি। ম্যাডাম ঈদের পরে তো আপনাদের প্রমোশন। তো আপনার ক্যাম্পাসের (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের) বয়ফ্রেন্ড (বাড়ি) ভাই তো ছাত্রলীগের সাথে জড়িত। এমনকি আপনার বয়ফ্রেন্ড ছাত্রলীগের সেক্রেটারি পদপ্রার্থী ছিল। তো ম্যাডাম কথা হচ্ছে আপনার প্রমোশনের জন্য লীগ বিষয়টা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এমতাবস্থায় আপনি কি বলতে চান ম্যাডাম। কীভাবে সহযোগিতা করতে পারি আপনাকে। বিষয়টা নিয়ে কিছু বলতে চাইলে বলতে পারেন আমি সহযোগিতা করব। নয়তো বিষয়টা অন্যদিকে নিয়ে যাব। মতামত আপনার কাছে ধন্যবাদ।'

তবে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২৪ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা রিয়াদকে তাদের সহপাঠী হিসেবে স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, 'অভিযুক্ত শিক্ষার্থী রিয়াদকে ফোন দিয়ে তার স্টুডেন্ট আইডি নম্বর জানতে চাইলে সে তা বলতে পারে না এবং পরবর্তীতে তার স্টুডেন্ট আইডি কার্ডের ছবি চাইলেও দিতে পারেনি। সে মিড এক্সাম দেওয়ার কথা বললেও তার সহপাঠীদের কাছ থেকে জানা যায় সে কোন ধরনের এক্সামে অংশগ্রহণ করেনি।'

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২৪ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, 'রিয়াদ নামের ছেলেটার সাথে তাদের পরিচয় দুই দিনের। প্রথম ক্লাশ শুরুর আগের দিন এই ছেলে ব্যাচের কয়েকজনের সাথে মেসেঞ্জারে কথা বলে পরিচিত হয় এবং পরের দিন ক্লাসে এলে সবার সাথে দেখা হয়। প্রথম দিকে ডকুমেন্ট ছাড়াই তাকে ব্যাচের গ্রুপে এড করা হলেও পরবর্তীতে তাকে গ্রুপ থেকে রিমুভ করা হয়েছিল।

শুরু থেকেই রিয়াদ বেশ কয়েকজন ব্যাচমেটকে নিজের ছাত্রদলের সাথে সংযুক্ততা সম্পর্কে বলে। তারপর তার ম্যানার জনিত কিছু সমস্যা থাকায় সিনিয়ররা রিয়াদকে সামনে ডাকলে জানা গেল সে এর আগেও আমাদের মোস্ট সিনিয়রদের কোন কোন ভাইয়ের সাথে কথা বলেছে, পরিচয় আছে। এরপর ইমিডিয়েট ভাই-আপুরা তাকে দল সম্পর্কিত কোন কিছু ব্যাচে বা বিভাগে শো করতে মানা করে। ওইদিনের পর সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২৪ ব্যাচের কারোর সাথে তার কোনো যোগাযোগ ছিল না। সে কোন ক্লাস, মিড, কুইজ ইভেন ফাইনালে অংশ নেয়নি। সে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২৪ ব্যাচ এ চান্স প্রাপ্ত স্টুডেন্ট কিনা সেটা কেউ বলতে পারে না। মোট কথা আমরা সমাজবিজ্ঞান ২৪ ব্যাচ এই রিয়াদ ছেলেটিকে চিনি না।'

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ফারহানা কামালের সাথে যোগাযোগ করার জন্য একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

অভিযুক্ত শিক্ষার্থী রিয়াদ বলেন, 'আমাকে নিয়ে যে চাঁদাবাজির অভিযোগ মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। কারো বিষয়ে সত্যতা যাচাই না করে এমন অপপ্রচার অন্যায় বলে মনে করি আমি। ম্যাডাম এর সাথে যে বড় ভাই (ছাত্রলীগ) এর রিলেশন সেটা জানার পরই ম্যাডামকে আমি হোয়াটসঅ্যাপ বলেছি, ম্যাডাম আমি কীভাবে আপনাকে সহযোগিতা করতে পারি। যেহেতু ম্যাডাম আমার নিজ ডিপার্টমেন্টের তাই আমি এভাবে বলেছি। কিন্তু ম্যাডাম এর সাথে আমার যে কথা হয়েছে সেখানে কোনো চাঁদা বা টাকার কথা উল্লেখ নেই। অথচ আমার নামে আজ চাঁদাবাজির অভিযোগ করা হয়েছে। যার কোন প্রমাণ অভিযোগকারীদের মধ্যে নেই। তাই আমি মনে করি এই মিথ্যা অপপ্রচার চালানোটা অন্যায়। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।'

হাবিপ্রবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক বার্নাড পলাশ বলেন, 'রিয়াদ আমাদের প্রোগ্রামে কখনো আসেনি। আমাদের কমিটির কেউ জড়িত কিনা এ বিষয়ে আমরা কাজ করেছি এবং কারো জড়িত হওয়ার প্রমাণ পাইনি। সে যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না এ বিষয়ে আমাদের অনেক আগে থেকে এক ধরনের সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছিল। একটা ২৪ ব্যাচের ছাত্র কখনোই এ ধরনের কাজ করার সাহস পাবে না।'

হাবিপ্রবি ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সুমন বলেন, 'আমি এই বিষয়ে কিছু জানি না। আমি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে জেনেছি। এর বেশি কিছু আমি জানি না। সে যদি দলের নাম ব্যবহার করে কোন অপকর্মে লিপ্ত হয় অবশ্যই তার শাস্তি হওয়া উচিত। খোঁজ নিয়ে জানা যায় সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না। সে সুকৌশলে বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য কাজ করে গেছে। তার সাথে দল বা আমার কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক নেই। অচিরেই তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. শামসুজ্জোহা বলেন, 'আমরা এখনো এমন কোন অভিযোগ পাইনি অভিযোগ পেলে আমি যথাযথ ব্যবস্থা নেবো।'

প্রসঙ্গত, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

আরও পড়ুন

ত্রাণ মজুত, তবুও নেই সহায়তা : ঝড়-বৃষ্টিতে ভাঙা ঘরে বৃদ্ধ দম্পতির মানবেতর জীবন-যাপন
ত্রাণ মজুত, তবুও নেই সহায়তা : ঝড়-বৃষ্টিতে ভাঙা ঘরে বৃদ্ধ দম্পতির মানবেতর জীবন-যাপন
ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হোক ব্যক্তি ও সমাজ, ঈদুল আজহায় এনসিপির শুভেচ্ছা বার্তা
ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হোক ব্যক্তি ও সমাজ, ঈদুল আজহায় এনসিপির শুভেচ্ছা বার্তা