Logo Logo

মিয়ানমারে বৌদ্ধদের ধর্মীয় উৎসবে জান্তার বিমান হামলা, নিহত অন্তত ৪০


Splash Image

মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের চাউং ইউ টাউনশিপে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উৎসব ও সরকারবিরোধী সমাবেশে সামরিক বাহিনীর বিমান হামলায় অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার (৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় থাডিংজুত পূর্ণিমা উৎসব চলাকালে।


বিজ্ঞাপন


উৎসবের আয়োজক কমিটির এক সদস্য ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সন্ধ্যা ৭টার দিকে শতাধিক মানুষ উৎসব ও জান্তা-বিরোধী প্রতিবাদে অংশ নিতে জড়ো হয়েছিলেন। ঠিক তখনই আকাশ থেকে সামরিক বাহিনী বোমা ফেললে মুহূর্তেই মৃত্যু ও আহতের বিভীষিকাময় চিত্র দেখা দেয়।

নিরাপত্তাজনিত কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আয়োজক কমিটির এক নারী সদস্য বলেন, “আমরা আগেই মানুষকে সতর্ক করেছিলাম, প্রায় এক-তৃতীয়াংশ লোক পালাতে সক্ষম হয়। কিন্তু হঠাৎ একটি মোটরচালিত প্যারাগ্লাইডার ভিড়ের ওপর দিয়ে উড়ে এসে দুটি বোমা ফেলে।”

তিনি আরও জানান, “শিশুরা সম্পূর্ণভাবে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল। পরদিন শেষকৃত্যে অংশ নেওয়ার সময়ও মাটিতে ছড়িয়ে থাকা শরীরের টুকরো, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও ছিন্ন দেহাংশ সংগ্রহ করা হচ্ছিল।”

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “যখন আকাশে প্যারামোটর উড়তে দেখি, মানুষ দৌড়াতে শুরু করে। আমি বলছিলাম ‘দৌড়াবেন না’, ঠিক তখনই দুটি বোমা ফেলা হয়। আমার সামনে দুই সহযোদ্ধা মারা যায়, আরও অনেকে প্রাণ হারান।” তিনি জানান, পরদিন নয়জন বন্ধুর জানাজায় অংশ নিতে হয়েছে তাকে।

স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, হামলায় অন্তত ৪০ জন নিহত এবং প্রায় ৮০ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত জান্তা সরকারের কোনো মুখপাত্রের কাছ থেকে তাৎক্ষণিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে হামলাটিকে ‘নৃশংস ও জঘন্য’ বলে বর্ণনা করেছে। সংস্থাটির মিয়ানমারবিষয়ক গবেষক জো ফ্রিম্যান বলেন, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হয়তো মিয়ানমারের সংঘাত ভুলে গেছে, কিন্তু সেনাবাহিনী এই নজরদারির অভাবের সুযোগ নিয়ে নির্বিচারে যুদ্ধাপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে।”

তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় জোট আসিয়ানকে (ASEAN) আহ্বান জানিয়েছেন, আসন্ন বৈঠকের আগে যেন তারা মিয়ানমার জান্তার ওপর চাপ বৃদ্ধি করে।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমার ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে জর্জরিত। গণতন্ত্রপন্থি বিদ্রোহী ও বিভিন্ন জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী একজোট হয়ে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে।

এদিকে সেনা সরকার আগামী ২৮ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে, যেটিকে জাতিসংঘের এক বিশেষজ্ঞ ‘প্রহসন’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এটি সামরিক শাসনকে বৈধতা দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা মাত্র। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো জানিয়েছে, তারা এই তথাকথিত নির্বাচন ঠেকাতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী বিভিন্ন বিদ্রোহী ঘাঁটি অবরুদ্ধ করে নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...