Logo Logo

ইসরায়েল-হামাস চুক্তি স্বাক্ষরের পর গাজায় উচ্ছ্বাস


Splash Image

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষরের খবরে আনন্দে ভাসছে গাজা। কেউ খুশিতে কাঁদছেন, কেউ হাততালি দিচ্ছেন, আবার কেউ বাঁশি বাজিয়ে, গান গেয়ে ও নেচে চিৎকার করে বলছেন— “আল্লাহু আকবর!”


বিজ্ঞাপন


পাঁচ সন্তানের মা ঘাদা এই খবর শোনার পর থেকেই চোখের জল থামাতে পারছেন না। তবে এ অশ্রু দুঃখের নয়— আনন্দের। বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, “হ্যাঁ, আমি কাঁদছি; কিন্তু এটা আনন্দের অশ্রু। মনে হচ্ছে, নতুন করে আবার আমাদের জন্ম হলো। আশা করছি, এই ভয়াবহ যুদ্ধের শেষ হচ্ছে।”

ঘাদা জানান, গাজার প্রধান শহর গাজা সিটির বাসিন্দা ছিলেন তিনি। ইসরায়েলি বাহিনীর বোমায় তাদের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর গত ১৫ মাস ধরে পরিবার নিয়ে তাঁবুতে বসবাস করছেন তিনি।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় বিকেলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউসে গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত নতুন একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। ইসরায়েল ও মধ্যস্থতাকারী দেশ মিসর ও কাতার তাৎক্ষণিকভাবে সম্মতি দিলেও, হামাস তখন কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

পরে ৩ অক্টোবর হামাসের সম্মতি জানানোর পরের দিন ৪ অক্টোবর ট্রাম্প ইসরায়েলকে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধের নির্দেশ দেন। এর পর ৬ অক্টোবর মিসরের শারম আল শেখে ইসরায়েল, হামাস, মিসর, যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক শুরু হয়।

দুই দিনেরও বেশি সময় ধরে চলা আলোচনার পর গতকাল রাতে ট্রাম্পের প্রস্তাবের প্রাথমিক পর্যায়ে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে চুক্তিতে স্বাক্ষর করে ইসরায়েল ও হামাস।

চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়টির মেয়াদ ছয় সপ্তাহ। এই সময়ের মধ্যে হামাস তাদের হাতে থাকা সব জিম্মিকে মুক্তি দেবে। বিনিময়ে ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধ রাখবে, বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেবে এবং গাজা থেকে পর্যায়ক্রমে সেনা প্রত্যাহার শুরু করবে।

চুক্তি স্বাক্ষরের খবর প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসে আনন্দ মিছিল বের হয়। তরুণরা বাঁশি, খঞ্জনি, ড্রাম বাজিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়েন।

ইমান আল কৌকা নামের এক তরুণী রয়টার্সকে বলেন, “আজ আমাদের আনন্দের দিন, আবার দুঃখেরও দিন। আমরা হাসব, কিন্তু একইসঙ্গে কাঁদব— যাদের হারিয়েছি, যা হারিয়েছি, সব স্মরণে। আমরা শুধু বন্ধু-স্বজন হারাইনি, হারিয়েছি আমাদের শহর। ইসরায়েল আমাদের প্রাগৈতিহাসিক আমলে ঠেলে দিয়েছে।”

গাজা সিটির অপর বাসিন্দা আহমেদ দাহমানের গল্পও একই রকম। ইসরায়েলি বাহিনীর বোমায় ধ্বংস হয় তার বাড়ি, প্রাণ হারান তার বাবা। রয়টার্সকে তিনি বলেন, “অবশেষে গাজায় রক্তপাত বন্ধ হচ্ছে— এটা আনন্দের খবর, কিন্তু আমরা যখন ফিরব, তখন কিছুই আর অবশিষ্ট থাকবে না।”

দাহমান জানান, বোমাবর্ষণের সময় নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পালাতে গিয়ে ধ্বংসস্তূপের নিচে বাবার মরদেহই রেখে যেতে হয়েছিল। “বাড়ি ফিরে আমার প্রথম কাজ হবে বাবার দেহাবশেষ খুঁজে বের করে দাফন করা।”

আহমেদের মা বুশরা বলেন, “এ যুদ্ধবিরতি আমার স্বামীকে ফেরত দিতে পারবে না; কিন্তু অন্তত অন্যদের জীবন রক্ষা পাবে।”

তার কণ্ঠ কেঁপে ওঠে— “আমি কাঁদব, এমন কান্না কাঁদব যা এর আগে কখনও, কোনোদিন কাঁদিনি। এই নিষ্ঠুর যুদ্ধ আমাদের কাঁদার সময় দেয়নি।”

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...