বিজ্ঞাপন
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাংক সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব অর্গানাইজড হেট (সিএসওএইচ) এর এক নতুন গবেষণা প্রতিবেদনে এই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, এআই এখন সংখ্যালঘুবিরোধী প্রচারণার এক শক্তিশালী অস্ত্রে পরিণত হয়েছে।
জাপানি সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়া তে প্রকাশিত ৬০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ভারতে মুসলিমদের লক্ষ্য করে তৈরি করা ১ হাজার ৩২৬টি এআই-নির্ভর ঘৃণামূলক পোস্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলো এক্স, ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুক-এর ২৯৭টি পাবলিক অ্যাকাউন্ট থেকে ছড়ানো হয়েছে।
সিএসওএইচ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক রাকিব হামিদ নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, “এটি কেবল সমুদ্রে ভাসমান বরফের চূড়ার মতো দৃশ্যমান ক্ষুদ্র এক অংশ। ভারতের ডিজিটাল জগতে এর পরিধি অনেক বিশাল।”
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে এ ধরনের কার্যক্রম তুলনামূলকভাবে কম ছিল, তবে ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময় হঠাৎ বৃদ্ধি পায়। এর সঙ্গে Stable Diffusion, Midjourney ও DALL·E–এর মতো এআই টুল সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য সহজলভ্য হয়ে ওঠার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, “এআই-নির্মিত ছবিগুলো এখন মুসলিমদের মানবিকতাবোধহীনভাবে উপস্থাপন, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানো, সহিংসতাকে নান্দনিকভাবে সাজানো এবং নারীবিদ্বেষ ও ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।”
ভারতে এই প্রতিবেদনের পর ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে বিশেষ করে মুসলিম নারীদের যৌন অবমাননাকর এআই-নির্মিত ছবি তৈরি হওয়ার প্রবণতা ক্রমবর্ধমান বলে সতর্ক করা হয়েছে। সিএসওএইচ-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, “ভারতের বর্তমান প্রেক্ষাপটে যেকোনো সাধারণ প্রতিবাদ বা স্থানীয় সংঘাতকেও সহজেই সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে, বিশেষ করে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে ঘৃণা ছড়াতে চায় তাদের হাতে। এআই-নির্মিত ছবি এসব প্রেক্ষাপটে সহজেই ব্যবহার করা সম্ভব।”
ডিজিটাল প্রাইভেসি অধিকারবিষয়ক গবেষক শ্রীনিবাস কোদালি নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, “সবচেয়ে ভয়ংকর দিক হলো, এসব কনটেন্ট সমাজের বিভিন্ন অংশে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশ্বাসকে গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এআই-নির্মিত মিডিয়ার প্রভাব সরলরেখায় চলে না। কে দেখছে, কীভাবে ব্যাখ্যা করছে—তা নির্ভর করছে দর্শকের মানসিক প্রেক্ষাপটে।”
হামিদ আরও বলেন, সমস্যার মূল লুকিয়ে আছে এআই মডেল তৈরিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে। “যেসব কোম্পানি এই মডেল বানাচ্ছে, তারা বিপুল পরিমাণ অনিয়ন্ত্রিত তথ্য, ঘৃণা ছড়ায় এমন কনটেন্ট ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দিয়ে সেগুলো প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।”
প্রতিবেদনটির শেষে নয়টি সুপারিশ রাখা হয়েছে, যেখানে এআই মডেল নির্মাতাদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, তাদের ‘অবিলম্বে ও ধারাবাহিকভাবে শক্তিশালী শনাক্তকরণ, রিপোর্টিং ও নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা চালু করতে হবে, যাতে অপব্যবহার তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত ও রোধ করা যায়।’
এই উদ্বেগের প্রেক্ষিতে, ভারতের ইলেকট্রনিকস ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য নতুন নিয়মের প্রস্তাব দিয়েছে। নতুন বিধান অনুযায়ী, ব্যবহারকারীদের বাধ্যতামূলকভাবে জানাতে হবে যে—তাদের কনটেন্ট এআই-নির্মিত কি না।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...