Logo Logo

আজ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা


Splash Image

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। ফাইল ছবি

ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক বছর পূর্ণ হলো আজ মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট। এই ঐতিহাসিক দিনে বিকেলে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।


বিজ্ঞাপন


একইদিন রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ারও কথা রয়েছে তার, যেখানে তিনি বহুল প্রতীক্ষিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি ঘোষণা করতে পারেন।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সূত্র জানিয়েছে, আজ বিকেল ৫টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করবেন অধ্যাপক ইউনূস। সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সূত্র নিশ্চিত করেছে, একইদিন রাতে তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণও দেবেন। এতে অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের অর্জন, জুলাই গণহত্যা সংক্রান্ত বিচারের অগ্রগতি এবং সংস্কারমূলক পদক্ষেপের সারসংক্ষেপ তুলে ধরার পাশাপাশি ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচন কোন মাসে অনুষ্ঠিত হবে, সেই সময়রেখাও ঘোষণা করা হতে পারে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, “তিনি রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। তবে নির্দিষ্ট সময় প্রেস উইং জানাবে।”

তবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেও ভাষণের নির্দিষ্ট সময় সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

সরকারের একটি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনকে তফসিল ঘোষণা করার জন্য আহ্বান জানাতে পারেন। আরেক সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। প্রথমে সিদ্ধান্ত ছিল ৮ আগস্ট ভাষণ দেওয়া হবে, তবে সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ৫ আগস্টেই ভাষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, “ভাষণ রাত আটটার আগে-পরে প্রচার হতে পারে। এতে জাতীয় নির্বাচনের সময়রেখা, রাজনৈতিক সংলাপের অগ্রগতি এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের রূপরেখা থাকতে পারে। তবে সবকিছু চূড়ান্ত হবে ৫ আগস্ট সকালে।”

এদিকে, গত ১৩ জুন লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠকের পর দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে রমজান শুরুর আগেই নির্বাচন সম্ভব—এই শর্তে বিচার ও সংস্কারে সন্তোষজনক অগ্রগতি অর্জনকে শর্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনও সম্ভাব্য সময়ের ঘোষণা ঘিরে তাদের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করছে। ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, “তফসিল ঘোষণার বিষয়টি একান্তই নির্বাচন কমিশনের। প্রধান উপদেষ্টা যে টাইমলাইন দিয়েছেন, তার ভিত্তিতে আমরা কাজ করছি। আমাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে।”

নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও আন্তঃমন্ত্রণালয় তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। গত ২৬ জুলাই রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ১৪টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে সংলাপে বসেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে তিনি জানান, চার-পাঁচ দিনের মধ্যেই নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময়সূচি ঘোষণা করা হবে।

২৮ জুলাই ড. ইউনূস তার বাসভবনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন, যেখানে তিনি সেনাবাহিনী, পুলিশ ও মাঠ প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় জোরদারের নির্দেশ দেন।

নির্বাচন ঘিরে নিরাপত্তা প্রস্তুতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ২৮ জুলাই জানান, সেপ্টেম্বর থেকে দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে নির্বাচন বিষয়ক বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, যা চলবে অক্টোবর ও নভেম্বর মাসজুড়ে।

তিনি আরও জানান, সেনাবাহিনী ৫ আগস্ট থেকে মাঠে সক্রিয় হয়েছে এবং নির্বাচনের সময় প্রায় ৬০ হাজার সেনাসদস্য মোতায়েন থাকবে। তারা বিচারিক ক্ষমতাসহ দায়িত্ব পালন করবেন।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ বেড়েই চলেছে। জাতির চোখ এখন প্রধান উপদেষ্টার আজকের ঘোষণার দিকে। বিকেলে ঘোষণাপত্র পাঠ ও রাতে সম্ভাব্য ভাষণের মাধ্যমে নির্বাচনের সময়সূচি স্পষ্ট হলে আগামী দিনের রাজনৈতিক গতিপথ নতুনভাবে নির্ধারিত হবে বলেই ধারণা বিশ্লেষকদের।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...